বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

 

প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে রয়েছে গর্ব করার মতো কিছু চমৎকার দর্শনীয় স্থান। আর এসব দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,ভ্রমণ  করতে কেনা ভালোবাসে।তাই আজ আমরা ভ্রমন প্রেমীদের জন্য নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের জানা-অজানা কিছু তথ্য। যা জানার ফলে আপনার ভ্রমণ হবে আরো সহজ ও আনন্দময়।

বাংলাদেশের সেরা ১০টি

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটক স্থল। এদেশের যেসব পর্যটক স্থল গুলোতে প্রায় সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সেরকম ১০টি পর্যটক স্থান বা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আমরা আপনাদের বিভিন্ন তথ্য জানাতে চেষ্টা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক -

সূচিপত্র :বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

১.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - কক্সবাজার :

বাংলাদেশের অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান কক্সবাজার। এটা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। তাই প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে সর্বাধিক মানুষ ভ্রমণ করে এই কক্সবাজারে। আর এজন্যই কক্সবাজারকে বলা হয় বাংলাদেশের 'পর্যটন রাজধানী'।ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে কক্সবাজার একটি আদর্শ স্থান। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে আরো আছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও স্থপনা। বিভিন্ন উপজাতি বা নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। বৈচিত্র্যময় এই জেলার জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাবতী বীচ,হিমছড়ি, ইনানী বিচ, মেরিন রোড, সেন্ট মার্টিন, রাম বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনা দিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি। এছাড়াও কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পার ঘেঁষে বানানো মেরিন ড্রাইভ আপনার ভ্রমণকে করবে আরো বেশি আনন্দময়।

২.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - সেন্টমার্টিন :

সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র পবাল দ্বীপ,যা দেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। এটা কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিনে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ছোট্ট দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিন কে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ নীল চকচকে পানি আর সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত  দেখার সুযোগ। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এই দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বগুড়া জেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানুন।

৩.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - সুন্দরবন :

সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেশের প্রকৃতি ও প্রাণী প্রেমি মানুষদের সব সময় আকর্ষণ করে। তাইতো সারা বছর জুড়ে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে পর্যটকরা ছুটে যায় এই সুন্দরবনী। সুন্দরবন পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের  অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এক অপরূপ বনভূমি। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এই সুন্দরবনের ৬৬ ভাগ বিস্তৃত রয়েছে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় এবং বাকি ৩৪ ভাগ বিস্তৃত রয়েছে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে 'বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সুন্দরবন মূলত সুন্দরী বৃক্ষের নাম অনুসারে করা হয়েছে। এই বনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়া সুন্দরবনে চিত্রা হরিণ, কুমির, নানা ধরনের পাখি ও অসংখ্য নদনদীর রয়েছে। এখানে প্রচুর উদ্ভিদ রয়েছে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের মোট ৭ টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো - করমজল,হারবাড়িয়া,কটকা,কচিখালী,দুবলার চর, নীল কমল (হরিণ পয়েন্ট) ও কলা গাছিয়া।

৪.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - শ্রীমঙ্গল:

দুটি পাতা ও একটি কুড়ির দেশ নামে খ্যাত শ্রীমঙ্গলকে বাংলাদেশের 'চায়ের রাজধানী' বলা হয়। শ্রীমঙ্গল সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা, যা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটা বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। এখানে যতদূর চোখ যায় সবুজ চা বাগান যেন হাতছানি দেয়। আর উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলা,বনভূমি, গিরিখাদ, হাওর, লেক,ঝরাল সৌন্দর্য সবার যেন নয়ন ভরিয়ে দেয়।

চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। তবে রাবার, লেবু, আনারস, পান ও কাঠের জন্য শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি ব্যাপক।

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের সবসময় আকৃষ্ট করে। তাই সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদ ভারে মুখরিত থাকে শ্রীমঙ্গল। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান,হামহাম জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, মাধবপুর লেক, রাবার বাগান, চা রিসোর্ট ও জাদুঘর ইত্যাদি।

5. বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। এটা রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। একসাথে মেঘ ও পাহাড়ের মিতালী দেখার সুযোগ থাকায় ভ্রমণ প্রেমী মানুষদের কাছে সাজেক ভ্যালি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র। সারা বছরই সাজেক ভ্যালি যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালের সাজেকের রূপ ভোলার মতো নয়।সাজেকের মোট আয়তন ৭০২ বর্গমাইল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।সাজেক রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। রাঙ্গামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। তাই সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় রাঙ্গামাটির ছাদ। এখানে প্রকৃতি মুহূর্তের মধ্যেই তার রং বদলায়।

আরো পড়ুনঃ খুলনা জেলার পৌরসভা কয়টি - খুলনা জেলার ইতিহাস

৬.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - জাফলং :

জাফলং সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইন ঘাট উপজেলায় ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি জাফলং। আর  এ জন্যই জাফলং কে বলা হয় 'প্রকৃতি কন্যা'।এখানকার পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা, শুনশান নিরবতা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দারুণভাবে কাছে টানে। তাইতো প্রকৃতির এই মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই এখানে ঢল নামে হাজারো মানুষের।

৭.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - বান্দরবান :

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতি সম্পন্ন জেলা। এখানে পাহাড়ের সাথে মেঘের মিলনের এক অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। নীলগিরি, নীলাচল, মেঘনা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণমন্দির, নাফাখুম জলপ্রপাত, বগালেক, রিজুক ঝর্ণা ইত্যাদি বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

৮.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - কুয়াকাটা :

কুয়াকাটার বাংলাদেশের আরো একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর যা মনোরম সমুদ্র সৈকতের জন্য পরিচিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩ কিলোমিটার চওড়া একটি বালুকাময় বিস্তীর্ণ।এখানকার মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখান থেকে একই সাথে সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া এখানে দেখার মত শুটকি পল্লী, ক্রাব আইল্যান্ড, গঙ্গামতীর জঙ্গ,সীমা বৌদ্ধ মন্দির প্রভৃতি রয়েছে। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা 'সাগর কন্যা ' হিসেবে পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ নীলফামারী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

৯.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - নিঝুম দ্বীপ :

নিঝুম দ্বীপ চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটা পূর্বে চর ওসমান নামে পরিচিত ছিল। নিঝুম দ্বীপ মেঘনা নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একটি চর। এটা একক কোন দ্বীপ নয় বরং চার পাঁচটি ছোট ছোট চর নিয়ে গঠিত। এটার আয়তন ১৪৫০ একর। মূলত দ্বীপটি একদমই নিশ্চুপ ও কোলাহলমুক্ত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে নিঝুম দ্বীপ। এখানে ঘোরার মত উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু জনপ্রিয় জায়গা রয়েছে, এগুলো হলো - চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর, কমলার দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ বন,নামা বাজার সি বিচ, দমার চরের কুমারী সি বিচ, চোয়াখালী সি বিচ ইত্যাদি। 

১০.বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান - ষাট গম্বুজ মসজিদ :

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার অবস্থিত। ধারণা করা হয়  ১৫শ শতাব্দীতে খান জাহান আলী এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ সংলগ্ন রয়েছে খান জাহান আলী দিঘী। এই মসজিদে আয়তন ১৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮৯ ফুট প্রশস্থ।এটা বাংলাদেশের ৩ টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানে মধ্যে একটি। এই মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও এতে মোট গম্বুজের সংখ্যা  ৮১ টি। সাত লাইনে এগারোটি করে ৭৭টি আর চার কোনায় ৪টি   মোট ৮১ টি।

আমার পাঠক বন্ধুরা, ভ্রমন করলে যেমন জ্ঞান বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনি মনেরও আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ হয়। তাই আমাদের উচিত পরিবার-পরিজনদের নিয়ে বছরে একবার হলেও নিজেদের পছন্দের জায়গায় ভ্রমণ করা। আমাদের আজকে আর্টিকেলটি ভ্রমণ প্রেমী পাঠকদের অবশ্যই ভালো লাগবে। সবার নিরাপদ ও সুস্থ জীবন কামনা করে শেষ করছি, সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url