জেনে নিন লবঙ্গর কিছু অসাধারণ গুনাগুন ও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, মসলা, শাকসবজি, ফুল ফল ইত্যাদির গুনাগুন, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম, ব্যবহারে নিয়ম প্রভৃতি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হই। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সুস্থতা। বন্ধুরা, আজও আমরা হাজির হয়েছি একটি সুপরিচিত মসলার পুষ্টিগুণ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে। মসলাটির ইংরেজি নাম Clove এবং এর বোটানিক্যাল নাম Syzygium aromaticum । নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন,মসলাটি হল লবঙ্গ। লবঙ্গকে আবার অনেকে লংও বলে থাকে। এটি আছে জীবাণুনাশক এবং ব্যথা নাশক গুনাগুন। আসুন জেনে নেই লবঙ্গের গুনাগুন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো কি কি-

Clove Immage

লবঙ্গ হল চিরসবুজ লবঙ্গ গাছের শুকিয়ে যাওয়া ফুল। এটি ঝাঁঝালো, মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত মসলা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। খাবারকে বাড়তি স্বাদযুক্ত করতে সাধারণত এই মসলা ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক আয়ুর্বেদিক ওষুধেও লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়।

লবঙ্গর পুষ্টি উপাদান :

USDA এর রেফারেন্স অনুসারে ১০০ গ্রাম লবঙ্গে ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম টোটাললিপিড, ২ গ্রাম সুগার, ২৭৪ কলো ক্যালোরি শক্তি ও ৩৩ গ্রাম ডায়েটারিফাইবা থাকে।

খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক কমবেশি সবাই আছে। আর ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি-৬,বি-১২,সি,এ,ই,এই,কে,থামিন, নিয়াসিন,ইউজেনল রয়েছে। এইসব যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক মহাঔষধ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা

লবঙ্গ গুনাগুন বা উপকারিতা-

লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়:

লবঙ্গ লিভারে নতুন কোষ গজাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি যৌগ উপাদান, যা লিভারের স্বাস্থ্যের মারাত্মক উন্নতি করে।

দাঁতের ও মুখের সমস্যা দূর করে :

লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির ক্ষয়, মুখের ঘা নিরাময় করে। এছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে রাসায়নিক মুক্ত মাউথ ওয়াশের কাজ করে। মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায় এই লবঙ্গ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে :

লবঙ্গে আছে নাইজেরিসিন নামের একটি যৌগ। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শরীরের ভেতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ খাওয়া বেশ উপকারী।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন রসুনের পুষ্টিগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা

হজম শক্তি বাড়ায় :

লবঙ্গ আমাদের দেহে এনজাইম নিরঃসনের মাধ্যমে ও এসিড ক্ষরণের মাধ্যমে হজমে সহায়তা করে এবং হজমের গতিশীলতা বাড়ায়। তাই পেট ফাঁপা, গ্যাস্টিকের সমস্যা, বমি বমি ভাব কমাতে লবঙ্গ বেশ কার্যকরী।

সর্দি কাশি ও ঠান্ডার ভাব কমায় :

সর্দি কাশির মহাঔষধ হিসেবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। লবঙ্গ চিবিয়ে রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে সর্দি কাশি , ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে সুফল পাওয়া যায়।

রক্ত পরিশোধন করে :

লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান গুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে ও রক্তকে পরিষ্কার করে।

খাবারের রুচি বাড়ায় :

অনেক সময় অনেক ভালো খাবার দেখেও আমাদের খাবারের প্রতি রুচি আসে না। সেক্ষেত্রে লবঙ্গ গুঁড়ো করে সকালে খালি পেটে খেলে খাবারের প্রতি রুচি ফিরে আসে।

আরো পড়ুনঃ দাঁত সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে লবঙ্গ অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। লবঙ্গে থাকা ইউজেনল শক্তিশালী আন্টিকাসিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী একটি উপাদান, যা ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :

লবঙ্গে রয়েছে ইউজেনল উপাদান যা আমাদের দেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সেই সাথে শ্বেত রক্তকণিকাকে সক্রিয় করে পুরো দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই লবঙ্গ।

হাড়ের সমস্যা দূর করে :

লবঙ্গে থাকা ইউজেনল ও ইউজেনল এক্সট্যাক্টিভস যৌগ হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের খনিজ ঘনত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল

লবঙ্গের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-

১. বেশি লবঙ্গ খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা যদি বেশি লবঙ্গ খায় তাহলে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায়।

৩. বেশি লবঙ্গ খেলে লবঙ্গে থাকা ইউজেনলের ফলে রক্ত অনেক বেশি পাতলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. বেশি লবঙ্গ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।

৫. অতিরিক্ত লবঙ্গ লিভারেও ক্ষতি করে।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, লবঙ্গ খাওয়া আমাদের জন্য খুবই উপকারী । তবে সেটা খেতে হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। লবঙ্গের গুণাগুণ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এই দুটোই মাথায় রেখে আমরা সুবিধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী লবঙ্গ ব্যবহার করব। বন্ধুরা, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আজকের মত বিদায়। সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url