বাংলা রচনা : মহান স্বাধীনতা দিবস/২৬ মার্চ (সকল শ্রেণীর জন্য উপযোগী)

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা সবাই? আমাদের আজকের পোস্টটি তোমাদের জন্য। কেননা আজ আমরা নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। যা তোমরা তোমাদের সকল একাডেমিক পরীক্ষা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে সুন্দর ভাবে লিখতে পারবে। রচনাটি হলো মহান স্বাধীনতা দিবস/২৬ মার্চ

26 march

মহান স্বাধীনতা দিবস/২৬ মার্চ

অথবা, জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব

ভূমিকা:

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। স্বাধীনতার অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে দেশ জাতির অগ্রযাত্রা কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায় না এটি কারোর ভিক্ষা বা দয়ার দান নয় স্বাধীনতার জন্য ইতিহাস বারবার রক্ত কলঙ্কিত হয়েছে তাই স্বাধীনতা প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ যে জাতি যেদিন স্বাধীনতা লাভ করে সেদিনটি জাতীয় জীবনে এক গৌরব, আনন্দ তাৎপর্যময় দিন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

২৬শে মার্চ, ১৯৭১ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে,- বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে। দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় স্বাধীনতা দিবসের আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তা হলো এদেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহিদদের আত্মবলিদান। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার মানুষ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক স্বৈর শাসনের ২৪ বছরের গ্লানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পায়। লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্তে বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতার সূর্য তাই এদেশের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস সবচাইতে গৌরবময় দিন

আরো পড়ুনঃ বাংলা রচনা- মহান বিজয় দিবস / ১৬ ডিসেম্বর

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে একটি আদর্শ-উজ্জ্বল দিক কোনো জাতিকেই জন্মভূমির জন্য এমনভাবে আত্মত্যাগ করতে হয়নি লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা এদেশের শ্যামল ভূমিতে উড়াতে সক্ষম হয়েছিল এজন্য এদেশের মানুষকে সহায়- সম্বলহীন অবস্থায় সংগ্রাম করতে হয়েছে এক শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে অবশেষে তারা সেই অকুতোভয় সংগ্রামে জয়ী হয়েছে ফলে আমরা লাভ করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ-‘বাংলাদেশ'

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস :

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ একদিকে পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের কুচক্রী শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে পূর্ব বাংলাকে শাসনও শোষণ করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহিদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে। এরপরই শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন

 ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করে এই দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ এর প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে হানাদার পাকবাহিনীর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৫টা . মিনিটে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে-বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন ১৯৭১- ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। তাই ১৬ই ডিসেম্বরকে আমরা পালন করি বিজয় দিবস হিসেবে

আরো পড়ুনঃ শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রিয় “শেখ রাসেল” রচনা

মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন : 

প্রতিবছর ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের জন্য আমরা ভোরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এদেশের সর্বস্তরের জনগণ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। দিবস উপলক্ষে সরকারি বেসরকারিভাবে আলোচনা সভা, কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজনে করা হয় তাছাড়া মসজিদ-মন্দির গির্জায় জাতির অগ্রগতি সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয় এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত উজ্জীবিত করে

মহান স্বাধীনতার চেতনা তাৎপর্য :

আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে- দিনটি সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর। দিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে বেদনায় মহীয়ান। প্রতিবছর গৌরবময় দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন স্বাধ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা

এদিক থেকে দিনটি আমাদের আত্মসমালোচনার দিন, হিসাব মেলাবার দিন, আত্মজিজ্ঞাসার দিন আমাদের কথাটি ভুলে গেলে চলবে না যে, সমগ্র দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা আত্মত্যাগের ফলেই এই স্বাধীনতা লাভ সম্ভব হয়েছিল আমাদের এই স্বাধীনতা দারিদ্র্য, সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। আদর্শগুলোর প্রকৃত রূপায়ণই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল্য লক্ষ্য হওয়া উচিত

স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পর এখনো অসংখ্য লোক অশিক্ষা দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বেকারত্বের জালে আবদ্ধ যুবক বেছে নিচ্ছে নৈতিক অবক্ষয় সমাজবিরোধী পথ। এককথায়, এখনো আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি আজ আমাদের দায়িত্ব, এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা

আরো পড়ুন ঃ লোককাহিনী - বেহুলা ও লক্ষিন্দরের বাসর ঘর

পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় সমূহ

অজস্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যাতে কারো ব্যক্তিগত বা দলগত চোরাবালিতে পথ না হারায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতা অর্জন করা যেরূপ কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা তার থেকে বেশি কঠিন। আজ বিশ্বের দিকে দিকে উৎকর্ষসাধনের প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে আমাদেরও সৃষ্টি করতে হবে উন্নয়নের ধারা। দেশ গড়ার কাজে আজ প্রয়োজন সমগ্র জাতির নতুন করে শপথ গ্রহণ সর্বপ্রকার স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে তবেই গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

উপসংহার

আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা যেরূপ তাৎপর্য বহন করে, তেমনি লক্ষ লক্ষ ক্লিষ্ট আর্তমানুষ যাতে জাতীয় পতাকাকে সমুন্নত রেখে নতুন জীবনকে পাথেয় করে নিজেদের গড়ার শপথ নিতে পারে সেদিকে আসাদের লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় স্বাধীনতা চেতনা পরিপন্থি কোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে স্বনির্ভর, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে সকলকে সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে পারলেই স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্বপ্ন পূরণ হবে 

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আজকের আয়োজন তোমাদের ভালো লেগেছে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে ধরনের সহজ সুন্দর রচনা তোমাদের আয়ত্ব করে রাখা প্রয়োজন। তোমাদের সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।

 সবাইকে ধন্যবাদ 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url