শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রিয় “শেখ রাসেল” রচনাঃ

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আগামী ১৮ই অক্টোবর পালিত হবে এবছরের 'শেখ রাসেল দিবস'। মূলত ১৮ অক্টোবর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন। তার জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২১ সাল থেকে এই দিনটি প্রতিবছর 'শেখ রাসেল দিবস' নামে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই আজ আমরা কিছু কিশোরদের জন্য নিয়ে এসেছি শেখ রাসেল সম্পর্কে একটি সুন্দর রচনা। যা তারা তাদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে লিখতে পারবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক রচনাটি -

শেখ রাসেল দিবস ২০২৩

                                                " আমাদের প্রিয় শেখ রাসেল "

ভূমিকা :

বাংলাদেশের সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ রাসেল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে মধ্যরাতে অতর্কিতে আক্রমণ চালায় কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য। তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। সেই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি ১১ বছরের ছোট্ট ফুটফুটে শিশু শেখ রাসেলও।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ১৫ ই আগস্ট -রচনা

শেখ রাসেলের জন্ম :

১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। তখন সমগ্র বাড়ি জুড়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। রাসেলের জন্ম হয়েছিল তার বড় বোন শেখ হাসিনার ঘরে। জন্মের সময় রাসেল ছিল স্বাস্থ্যবান। জানা যায়, তার জন্মের কিছুক্ষণ পর বড় বোন শেখ হাসিনা একটা ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। রাসেলের জন্ম যেন শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারেরই নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ ছিল।

রাসেলের নামকরণ :

শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব শান্তির পক্ষে। আর এ কারণে তিনি ছিলেন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেলের বিশেষ ভক্ত। বাট্রান্ড রাসেল ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের বড় নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সমগ্র পৃথিবী যখন সম্ভবত একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ছিল, তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আদর্শ হয়ে ওঠেন এই বাট্রান্ড রাসেল। বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারই এই মহান মানুষটির দ্বারা  অনুপ্রাণিত হয়েছিল। আর সেই অনুপ্রেরণা থেকেই বঙ্গবন্ধু তার ছেলের নাম রাখেন শেখ রাসেল।

শেখ রাসেলের ছেলেবেলা :

শেখ রাসেলের ছেলেবেলা ছিল আরো দশটা বাচ্চার মতই দুরন্ত প্রাণবন্ত। তবে জন্মের পর খুব বেশি তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিছু দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে ঢাকায় থাকলেও পরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের নিয়ে যাওয়া হয়। শোনা যায়, শেখ রাসেল বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন। 

মাত্র ২ বছর বয়সী রাসেল তার বোনকে জিজ্ঞেস করল - আমি কি তোমার বাবাকে বাবা বলতে পারি? তার মানে তার বাবা কার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। রাসেল তার ছোট জীবনের বেশিরভাগ সময় তার মা ও বোনদের সাথে কাটিয়েছেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে যখন তাকে হত্যা করা হয় তখন রাসেল চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।

আরো পড়ুনঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

শেখ রাসেল হত্যা :

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের এই অভিশপ্ত কাল রাতের কথা আমরা সবাই জানি। সেদিন একদল তরুণ বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভবন ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলে। তারা বঙ্গবন্ধু সহ তার স্বপরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই নরপিশাচরা ১১ বছরের ছোট শিশু রাসেলকেও নিষ্ঠুরভাবে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে।

তার নামে রচিত গ্রন্থ :

মশের আলী হীরা শেখ রাসেলের স্মৃতি স্মরণে " আমি মায়ের কাছে যাব - শেখ রাসেল " নামে বই প্রকাশ করেন। যা শেখা প্রকাশনী থেকে ১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রচিত " আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা " বইটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়। এছাড়া শেখ রাসেলকে নিয়ে যেসব বই প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -

সবার প্রিয় শেখ রাসেল - মোঃ জহিরুল করিম হাসান

বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল - রঞ্জনা বিশ্বাস

শেখ রাসেলের জন্য ভালোবাসা - মোহ আব্দুল্লাহ

বাঙালির হৃদয়ে শেখ রাসেল - ড: অনু মাহমুদ

রাসেলের জন্য অপেক্ষা - সেলিনা হোসেন

শেখ রাসেলকে লেখা চিঠি - লুৎফর রহমান রিটন

গল্প কবিতায় শেখ রাসেল - এ কে এম ফজলুল হক

ছোটদের শেখ রাসেল - রফিকুজ্জামান হুমায়ুন

উপসংহার :

শেখ রাসেল বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ন ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি তার মধ্যে রূপকথার মত নিজের শৈশব খুঁজে পায়। তার মৃত্যুর কাহিনী বারবার আমাদেরকে দেশের সেই করুন ইতিহাসের দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়। শেখ রাসেল চিরকাল আমাদের বাংলার ইতিহাসে জ্বলন্ত প্রতীক হয়ে থাকবে।

কেউ পাঠক বন্ধুরা, আজকে আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শেখ রাসেল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url