অপরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য এবং পারণের সময়সূচি ও মন্ত্র

হরেকৃষ্ণ পাঠক বন্ধুরা🙏 সবাইকে নমস্কার। আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ভালো আছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় একাদশীর নাম অপরা। আগামী ২৩মে  রোজ শুক্রবার আমাদের পালন করতে হবে এই অতি পবিত্র অপরা একাদশী ব্রত। এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সনাতন ধর্ম অনুসারে একাদশী তিথি অতি পূণ্য প্রীতি হিসেবে বিবেচিত। কেননা এই তিথি ভগবানের প্রিয় তিথি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সের যেকোনো ব্যক্তির ভক্তি সহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। একাদশী ব্রত পালন করে একাদশী মাহাত্ম্য  পাঠ ও শ্রবণ করলে শ্রী হরির কৃপা লাভ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের জানাবো অতি পবিত্র  আপরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য,একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য,পরের দিন পারণের সময়সূচী ও পারণের মন্ত্র।


বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই অতি পবিত্র অপরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -

অপরা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য :

মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, হে কৃষ্ণ! জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় একাদশীর নাম কী এবং তার মাহাত্ম্যই বা কী, আমি শুনতে ইচ্ছা করি। আপনি অনুগ্রহ করে তা বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে মহারাজ! মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনি খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন। বহু পুণ্য প্রদানকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রূণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন, মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি গুরুতর পাপ এই ব্রত পালনে নষ্ট হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ এই গরমে ডাবের পানির জাদুকরি গুনাগুন জেনে নিন

যারা মিথ্যা সাক্ষ্যদান করে, ওজন বিষয়ে ছলনা করে, শাস্ত্রের মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদান করে, জ্যোতিষের মিথ্যা গণনা ও মিথ্যা চিকিৎসায় রত থাকে, তারা সকলেই নরকযাতনা ভোগ করে। এ সমস্ত ব্যক্তিও যদি এই ব্রত পালন করে, তবে তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। ক্ষত্রিয় যদি স্বধর্ম ত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়, তবে সে ঘোরতর নরকগামী হয়। 

কিন্তু সে-ও এই ব্রত পালনে মুক্ত হয়ে স্বর্গগতি লাভ করে। মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগ স্নানে যে ফল লাভ হয়, শিবরাত্রিতে কাশীধামে উপবাস করলে যে পুণ্য হয়, গয়াধামে বিষ্ণুপাদপদ্মে পিণ্ডদানে যে ফল পাওয়া যায়, সিংহ রাশিতে বৃহস্পতির অবস্থানে গৌতমী নদীতে স্নানে, কুম্ভে কেদারনাথ দর্শনে,বদরিকাশ্রম যাত্রায় ও বদ্রীনারায়ণ সেবায়, সূর্যগ্রহণে কুরুক্ষেত্রে স্নানে, হাতি ঘোড়া, স্বর্ণ দানে এবং দক্ষিণা-সহ যজ্ঞ সম্পাদনে ফল লাভ হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ স্ট্রেচ মার্ক বা শরীরের ফাটা দাগ দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে

এই অপরা ব্রত পাপরূপ বৃক্ষের কুঠারস্বরূপ, পাপরূপ কাষ্ঠের দাবাগ্নির মতো,পাপরূপ অন্ধকারের সূর্য্যসদৃশ এবং পাপহস্তির সিংহস্বরূপ। এই ব্রত পালন করে যে ব্যক্তি জীবনধারণ করে, জলে বুদবুদের মতো তঁদের জন্ম-মৃত্যুই কেবল সার হয়। অপরা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়। এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণ করলে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়। ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য :

★ ধান জাতীয় - 

চাল,মুড়ি,চিড়া,খই, শ্যামাচাল,কাউন ইত্যাদি। 

★ গম জাতীয় -  

আটা,ময়দা,সুজি,পউরুটি,হরলিক্স,বিস্কুট ইত্যাদি। 

★যব/ভূট্টা জাতীয় -

ছাতু,ভুট্টার খই ইত্যাদি। 

★ ডাল জাতীয় -

সব ধরনের ডাল। 

★ সবজি জাতীয় - 

বরবটি, শিম,মটরশুঁটি, বেগুন,টমেটো, গাজর,মূলা ইত্যাদি। 

★ তৈল জাতীয় - 

সরিষা তেল,সয়াবিন তেল,তিল তেল ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণ করুন আপনার উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল

পারণের সময়সূচী :

২৪ মে রোজ শনিবার সকাল ৫.২৫ মিনিট হতে ৯.৫২ মিনিটের মধ্যে। 

পারণ মন্ত্র :

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব। 

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।। 

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।  

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে অপরা একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url