প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আলোচনায় আপনাদের স্বাগতম ৷ আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় 'বন্যা' ৷ বন্যা সম্পর্কে আমরা ছোট বড় সকলেই কিন্তু জানি ৷ বিগত ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮,১৯৯০, ১৯৯৫, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে আমাদের দেশে প্রলয়কারী বন্যা হয় ৷ নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য বন্যা একটি নিয়মিত প্রকৃতিক দুর্যোগ ৷ প্রায় প্রতি বছর বন্যায় দেশের কোথাও না কোথও অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷

Floods Of Bangladesh

এবার আপনাদের প্রশ্ন হতেই পারে বন্যা কেন হয় এই দুর্যোগের কারণ কী ? সমস্ত দুর্যোগের মত এরও পেছনে কোনো মানবসৃষ্ট কারণ আছে কি না ? আসুন নিচে আমরা এই সকল বিষয় আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেই –

আরো পড়ুনঃ আসুন জেনে নেই ভূমিকম্প কি? কেন হয় এই ভূমিকম্প? ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়ই বা কি কি?

বন্যা কী ও কেন হয় :

বন্যা হল নদী ভরাট হয়ে নদীর পানি উপচে সমতল ভূমিকে প্লাবিত হওয়াকে বোঝায় অর্থাৎ বর্ষাকালে যখন নদী নালা, খাল বিল, হাওর-বাওর ও সমস্ত জনপদ পানিতে ভেসে যাওয়া কে বোঝায়। বন্যা হওয়ার পেছনে অনেক জটিল কারণ রয়েছে ৷যার মধ্যে অন্যতম একটি নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া ৷ নদীভাঙন ,নংরা অব্যবস্থাপনা সহ নানা কারণে নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদ-নদীগুলোর ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে ৷ 

যে কারণে ভারি বর্ষণ বা উজানের পানি অনেক সময় নদ-নদীগুলোর মাধমে সাগরে যেতে পারে না ৷ফলে নদীর দুই পাশে বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে ৷ এছাড়াও মৌসুমী বায়ুর কারণে বঙ্গোপসাগররে জোয়ারের কারণে উজানের পানি অনেক সময় নদ-নদী মাধ্যমে সাগরে যেতে পারে না ৷ফলে নদ-নদীর আশেপাশে বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে ৷ আবার বাংলাদেশে অনেক এলাকা সমতল হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে নিকাশন না হয়ে জলাবদ্ধতার মাধ্যমে বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে ৷ বিগত কালের ঘূর্ণিঝড় ও সিডর এবং এদের প্রভাবে সৃষ্ট  বন্যার কথা আমাদের সকলের আজও মনে আছে ৷

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস

বন্যা প্রতিরোধ ও মোকাবিলার কৌশল :

এখন আমরা এই বন্যা প্রতিরোধ ও মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে জানবো ৷ যেহেতু বন্যা সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ হলো নদ-নদী সমূহের পানির সীমিত ধারণ ক্ষমতা  ৷ তাই বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নদী খনন করে এদের পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যেন ভারী বর্ষণ বা উজানের পানি এলেও যাতে বন্যা না হয় ৷

 বাংলাদেশ সহ দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশ এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে ৷ এজন্য ১৯৬০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮০০০ কি.মি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ৷ প্রায় প্রতিবছর এই সকল বাঁধে ভাঙনের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দেয় ৷ অনেক সময় এটি ঘটে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অদক্ষতার কারণে ৷

নদী শাসনের মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধ করা :

বন্যা দমনের অন্যতম একটি মাধ্যম নদী শাসন ৷ এখন আপনাদের মনে হতেই পারে নদী শাসন আবার কী ? নদী শাসন হচ্ছে নদীর পাড়ে পাথর , সিমেন্টের ব্লক , বালির বস্তা , কাঠ বা বাঁশের ঢিবি তৈরি করে এগুলোর মধ্যমে বন্যা প্রতিরোধ করা ৷ এছাড়াও নদীর পাড়ে গাছ লাগানো , পানিপ্রবাহের জন্য সুইস গেট নির্মাণ করা - এগুলোই হলো নদী শাসনেরই অংশ ৷

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী :-

বন্যা সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস এবং সতর্কবাণী প্রচার করে বন্যাজনিত ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো যেতে পারে ৷ বাংলাদেশের ৫৮ টি নদীর উৎপওিসথল হচ্ছে ভারত , নেপাল ভূটান ৷ এই জন্য অনেক সময়ে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না ৷ কাজেই আমাদের পাশের দেশগুলো আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে, যেন আগে থেকেই এই সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যায় এবং তার উপর ভিওি করে একটা ফলপ্রসূ  ব্যবস্থা নেওয়া যায় ৷

এছাড়াও নিচু ও বন্যা প্রবণ এলাকায় যেন জনবসতি গড়ে না ওঠতে পারে , সেজন্য ভূমি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে ৷ বন্যা আয়ত্বকরণ এবং মোকাবিলার জন্য জনসচেতনতা তৈরি করা বানভাসী মানুষের উদ্ধারে বড় ভূমিকা পালন করে ৷ তাই এই ব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ৷

ভয়াবহ বন্যা হলে সরকারি উঁচু ভবনে যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাময়িক  বসবাস স্থান হিসাবে ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে ৷ আবার উঁচু স্থানে বসবাস যোগো কিংবা মালামাল সংরক্ষণ যোগো ,উঁচু রাস্তা ঘাট ,উঁচু স্থানে বাজার কিংবা স্কুল ইত্যাদি তৈরি করে বন্যা মোকাবিলা করা যায় ৷ বন্যার সময় রাস্তা- ঘাট ডুবে যায়, ঠিক সে সময় চলাচলের জন্য স্পিডবোট এবং নৌকার  ব্যবস্থা রাখাও বন্যা মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে ৷

আরো পড়ুনঃ একজন সাধারণ কবির অসাধারণ কবিতা

 বন্যা আগাম প্রস্তুতিও বন্যা মোকাবিলার কৌশল হিসাবে গণ্য করা হয় ৷ বিপুল জনসংখ্যা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়লে এবং আগে থেকে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য , পানি ,ঔষধপত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করে না রাখলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে পারে ৷ কোনো একটি এলাকা বন্যা কবলিত হলে তখন সেখানকার মানুষের  কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা থাকে না ৷ বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে ৷ তাই তাদের পুনবাসনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখতে হবে ৷

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , বন্যা একটি নিয়মিত প্রকৃতিক দুর্যোগ ৷ তাই বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া সাথে সাথে বন্যা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ আর আমাদের সকলের এলাকায় কম বেশি বন্যা হয় ৷ তাই আমাদের সকলের উচিত দরিদ্র বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের দুঃখ -দুরদশা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা ৷

আর্টিকেল রাইটারঃ অণির্বাণ কুণ্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url