মৃৎশিল্প বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য

 

প্রিয় পাঠক, আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আজ আপনাদের জানাবো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পের কথা। যা আমাদের নিজস্ব শিল্প, আমাদের প্রাণের শিল্প। হ্যাঁ, বন্ধুরা আপনারা ঠিক ভেবেছেন তা হল আমাদের শখের মৃৎশিল্প। মৃশিল্প হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ন্যতম নিদর্শন। এটা শুধুমাত্র শিল্প নয় এর মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে আবহমান গ্রাম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জৌলুস।


সাধারণত মাটির তৈরি শিল্পকর্ম কে বলা হয় মৃৎশিল্প আর এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের হাজারো কুমার পালদের জীবন জীবিকা।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চা না হওয়ার কারণ ও প্রতিকারঃ

প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে মৃৎশিল্পের চর্চা চলে আসছে। এই শিল্প আমাদের সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। 'মৃৎ' শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর শিল্প বলতে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এজন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা যায়। আর যারা এই শিল্প নিয়ে কাজ করেন তাদের কুমার বা পাল বলে। 


মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ হল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস ও বালি। তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে এই শিল্পের কাজ করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন এঁটেল মাটি  এবং শিল্পীর হাতের নৈপূণ্য ও কারিগরি জ্ঞান।

আমাদের দেশে এই শিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। পোড়ামাটির নানাবিধ কাজ, গৃহস্থলীর নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিমা, ফুলের টব, শো-পিস,বাসন, সাজের হাড়ি, মাটির ব্যাংক সহ অসংখ্য জিনিস আজও কুমাররা তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। তাছাড়া মেয়েদের বিভিন্ন মাটির তৈরি গহনাও পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন মেলায় ও দোকানগুলোতে। 

আরো পড়ুনঃ শুক্রানু কি দিয়ে তৈরি এবং শুক্রানু তৈরি হয় কিভাবে

মৃৎশিল্পের এক অন্যতম সুন্দর্য ফুটে উঠে টেরাকোটায়। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মত পুড়িয়ে তৈরি করা হয় টেরাকোটা। শালগাম বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরে এই টেরাকটার কাজ রয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। এসব ঐতিহ্যময় মৃৎশিল্প থেকে এদেশের মানুষের শিল্পী মনের পরিচয় পাওয়া যায়।


তবে দিন দিন এই শিল্প যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে কুমারা তাদের পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁচ,প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির তৈজসপত্র সহজলভ্য, রুচিশীল ও টেকসই হওয়ায় মৃৎশিল্পের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক মৃশিল্পী তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ পুডিং বানানোর নিয়ম- চুলায় পুডিং বানানোর নিয়ম


মৃৎশিল্প হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। কেননা সারা বিশ্বে এই শিল্পের চাহিদা ব্যাপক। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কুমারদের সরকারিভাবে মৃৎশিল্পের স্বীকৃতি দিয়ে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বহুমুখী উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাহলেই মৃশিল্পের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো তা  আমাদের  জানাতে ভুলবেন না। আপনার ও আপনার পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত শেষ করছি, ধন্যবাদ সবাইকে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url