চলুন জানা যাক ফাইবারের গিগ কি ও গিগ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ফাইভার (fiverr)ফাইভার সম্পর্কে আগের একটি আর্টিকেলে আমি আলোচনা করেছি। আমার মনে হয়, আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছিলেন যে ফাইভার মার্কেটপ্লেসটা আসলে কি। আর আজকে আমি আলোচনা করব ফাইভারে গিগ (Gig) তৈরি সম্পর্কে। গিগ হল সেলার ফাইভারে যে সার্ভিস গুলো অফার করে,সেগুলো কে বোঝায়।

gig Image

 

ফাইভার মার্কেটপ্লেস থেকে প্রতিমাসে হ্যান্ডসাম এমাউন্ট টাকা ইনকাম করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে fiverr.com এ একটি একাউন্ট বা প্রোফাইল খুলতে হবে। এরপর প্রোফাইলে আপনার কাজের দক্ষতা সম্বলিত কয়েকটি চমৎকার গিগ তৈরি করতে হবে। কেননা এই গিগের উপরই নির্ভর করছে আপনার অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা। তাই ফাইভারে কাজ পেতে গেলে অবশ্যই ভালো কয়েকটি গিগ থাকতে হবে। চলুন বন্ধুরা তাহলে আজকে আমরা জেনে নিই গিগ কি এবং গিগ তৈরি পদ্ধতি -

গিগ কি :

গিগ হলো আপনি যে ধরনের কাজ পারেন তা শোআপ করা। অর্থাৎ আপনার যোগ্যতা দক্ষতা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করে তা ফাইভারে উপস্থাপন করা। বলা যায় গিগ হচ্ছে এক ধরনের সিভি। মূলত ফাইভারে গিগ দেখেই একজন ক্লায়েন্ট বা বায়ার তার পছন্দমত কর্মী খুঁজে নেয়। ফাইভারে একটি গিগের সর্বনিম্ন মূল্য ৫ ডলার এবং সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারিত হয় বায়ার ও সেলারদের আলোচনা মাধ্যমে।

আরো পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায় ২০২৩

গিগ তৈরির পূর্বে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে :

ফাইভারে কিছু রুল রেগুলেশন আছে যেগুলো মেনে আপনাকে গিগ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সব বিষয়ে গিগ তৈরি করতে পারবেন না। বিষয়গুলো হল -

এডাল্ট রিলেটেড

অবৈধ বা প্রতারণামূলক সার্ভিস

কপিকাইটেড এবং ট্রেডমার্ক প্রডাক্ট সেল।

গিগ তৈরীর পদ্ধতি :

গিগ তৈরি করার জন্য আপনার প্রোফাইল লগইন করার পর ডান পাশে যেখানে আপনার আইডি সেখানে ডলার $ চিহ্নিত সবুজ রঙের ডাউন এ্যারোতে ক্লিক করুন। এখন ফাইভার প্রোফাইল থেকে create a Gig ক্লিক করুন। এখন আপনার সামনে যে ইন্টারফেস চলে আসবে সেটা সতর্কতার সাথে লক্ষ করুন।

গিগ টাইটেল (Gig Title)- এখানে আপনি যে অফার বা সার্ভিসটি দিতে চান তা টাইপ করুন। এক্ষেত্রে টাইটেলের ঘরে শুরুতে I will এবং শেষে for $ কথাটি অটোমেটিকলি বসবে, আপনাকে উল্লেখ করতে হবে না। আপনি শুধু আপনার টাইটেলের বাকি অংশ লিখে ফেলুন। যেমন ধরুন আপনি SEO,Backlink,Facebook Like, Twitter,Business card  ইত্যাদিতে এক্সপার্ট তো আপনি এভাবে লিখতে পারেন Serve actual SEO for your Business বা give you real USA Facebook Like বা create backlink ইত্যাদি। এরপর একটি sentence তৈরি হবে। যেমন - I will serve actual SEO for your business for $ 5এবার তৈরি হয়ে গেল ফাইভারে গিগ টাইটেল। তবে কোন র‍্যাঙ্ক করা গিগ থেকে টাইটেল কপি করা উচিত নয়। এটা মারাত্মক ভুল। আপনার গিগ টাইটেলটি হতে হবে অন্যদের চেয়ে আকর্ষণীয় এবং আলাদা।

আরো পড়ুনঃ ফাইভার কি ? ফাইভার থেকে সত্যিই কি ইনকাম করা যায়।

গিগ ক্যাটাগরি (Gig category)- এখানে আপনি যে ধরনের কাজ বা সার্ভিসের ওপর গিগ তৈরি করতে চাচ্ছেন সে ধরনের ক্যাটাগরি সিলেক্ট করুন। এক্ষেত্রে প্রথমে মেইন ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে এবং পরে সাব-ক্যাটেগরি সিলেক্ট করতে হবে। যেমন -মেইন ক্যাটেগরিতে SEO এবং সাব-ক্যাটাগরিতে Facebook Marketing, Google Rang ইত্যাদি।

গিগ ট্যাগ (Gig tag) - ট্যাগ হলো keyword এর মত। এই ট্যাগের মাধ্যমেই বায়াররা আপনার গিগটি খুব সহজেই ফাইভারে  খুঁজে পাবে। তাই ট্যাগ লেখার ক্ষেত্রে আপনার কাজ বা সার্ভিস রিলেটেড ট্যাগ লিখতে হবে। যেমন - SEO এর জন্য লিখুন Top ranking, SEO service, Backlink ইত্যাদি। এখানে সর্বোচ্চ ৫ টি এবং সর্বনিম্ন ৩ টি লিখতে হবে। ট্যাগ সঠিক হলে অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

গিগ প্রাইসিং (Gig  Pricing)- ফাইভার প্রাইসিং অপশনে আপনি যে ধরনের সার্ভিস দেবেন তার উপর আপনাকে একটি প্যাকেজ তৈরি করতে হবে। যেমন -BASIC,STANDARD এবং PREMIUM - এই ৩ টি নামের প্যাকেজ দিতে হবে। BASIC -এর জন্য কাজ ও সময় কম তাই মূল্য কম, STANDARD -এর জন্য আরো একটু কাজ বেশি ও সময়ও বেশি তাই প্রথমটার চেয়ে মূল্যও একটু বেশি, আর PREMIUM হল সবচেয়ে উচ্চমানের প্যাকেজ। এটাতে আপনার কাজ অনেক বেশি থাকবে এবং মূল্যও অনেক বেশি পাবেন। আপনি চাইলে প্যাকেজগুলোর সাথে অতিরিক্ত সেবাও দিতে পারেন। এজন্য আপনাকে এক্সটা সার্ভিস সহায়ক সেবাগুলোর নাম লিখে সেভ এবং কনটিনিউ অপশন নির্বাচন করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল কি সত্যিই উপকারী

গিগ ডেসক্রিপশন (Gig Description)-এই ঘরে আপনাকে আপনার গিগের সার্ভিস সম্বন্ধে লিখতে হবে। অর্থাৎ আপনি এই গিগ থেকে কি কি সার্ভিস দিবেন, কিভাবে দিবেন, সার্ভিসের সময়ের পরিধি  কতদিন, বাইয়ার কি কি সুবিধা পাবে ইত্যাদি যত ধরনের সুবিধা আপনি এই গিগ দিয়ে দিতে পারবেন তা উল্লেখ করবেন। তবে আপনার সার্ভিসটি যদি ফাইবারের মাধ্যমে বিক্রি হয় তাহলে যা যা উল্লেখ করেছেন সেই মতো অবশ্যই কাজ করে দিতে হবে। আর বায়ার যদি আপনার উল্লেখিত সার্ভিসের চেয়ে বেশি সার্ভিস চায় তাহলে বলবেন আমার গিগের সার্ভিসে এগুলো নেই। আরো একটি বিষয় আপনি সবার শেষে উল্লেখ করে দিতে পারেন তা হল আপনার গিগটি অর্ডার করার পূর্বে আপনাকে যেন অবশ্যই মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কারণ কাজটি করতে পারলে আপনি একসেপ্ট করবেন এবং না পারলে দুঃখিত বলে মেসেজের রিপ্লাই দিবেন

ইন্সট্রাকশন ফর বায়ার (instruction for Buyer) - এখানে আপনার সার্ভিস কমপ্লিট করতে বাইরের কাছ থেকে আপনার কি কি প্রয়োজন পরবে তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন ধরুন ইউজার, পাসওয়ার্ড, লেআউট, কন্টেন্ট, ইমেজ, লিংক ইত্যাদি। কারণ এসব তথ্য ছাড়া আপনি নির্দিষ্ট সময়ে তার নির্দেশনা মত কাজ করতে পারবেন না।

গিগ গ্যালারি (Gig Gallery) - এই অপশনে আপনাকে ছবি আপলোড করতে হবে। এখানে আপনি ১ থেকে ৩ টি ছবি এবং ১ টি ভিডিও আপলোড দিতে পারবেন। তবে ছবি গুলোর স্কিন রেজুলেশন প্রস্থ ৬৮২ পিক্সেল  ও উচ্চতা ৪৫৯ পিক্সেল হতে হবে। এখানে আপনি আপনার সার্ভিস রিলেটেড ছবি আপলোড করবেন যেন বায়ার এটা দেখে আপনার সার্ভিসের ধরন ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনুমান করতে পারে। আরো একটি ব্যাপার ছবিটি আপনি JPG তে সেভ করবেন অন্যথায় আপনি গ্যালারিতে অ্যাড করতে পারবেন না।

এখন আপনাকে Published Gig এ ক্লিক করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার গিগটি পাবলিশ হয়ে যাবে এবং ফাইভার আপনাকে গিগটির লিংক দেবে।এভাবে তৈরি করে ফেলুন একটি  চমৎকার গিগ।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এই আর্টিকেলটি পড়ে ফাইভারে গিগ কি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আর আমি খুব সিম্পল ভাবে ফাইভারে গিগ তৈরীর পদ্ধতি আপনাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি। আশা করি উপকৃত হবেন। আমার পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এতে আপনার মাধ্যমে অন্যরাও সহযোগিতা পাবে। সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url