পবিত্র পুত্রদা একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য ও পারণের সময়সূচী

প্রিয় সনাতনী পাঠক বন্ধুরা, হরেকৃষ্ণ 🙏 সবাইকে নমস্কার। আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ভালো আছেন। আগামীকাল ২১শে জানুয়ারি রোজ রবিবার পালিত হবে অতি পবিত্র পুত্রদা একাদশী ব্রত। হিন্দু ধর্ম অনুসারে একাদশী তিথি অতি পূণ্য প্রীতি হিসেবে বিবেচিত। একাদশী ব্রত পালনে সমস্ত পাপ বিনষ্ট, সর্ব সৌভাগ্য ও ভগবান শ্রী হরির প্রীতি লাভ হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সের যেকোনো ব্যক্তির ভক্তি সহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। একাদশী ব্রত পালন করে একাদশী মাহাত্ম্য  পাঠ ও শ্রবণ করলে শ্রী হরির কৃপা লাভ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের জানাবো পবিত্র পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য, পরের দিন পারণের সময়সূচী এবং পারণের মন্ত্র। 

broto

বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই পবিত্র পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -

পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য :

যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ ! পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি ? বিধিই বা কি, কোন দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান করেছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে বলুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ ! এই একাদশী “পুত্রদা” নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপবিনাশিনী ও কামদা এই একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন সিদ্ধিদাতা নারায়ণ। ত্রিলোকে এর মত শ্রেষ্ঠ ব্ৰত নেই। এই ব্রতকারীকে নারায়ণ বিদ্বান ও যশস্বী করে তোলেন। এখন আমার কাছে ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবণ করুন।

ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রানীর নাম ছিল শৈব্যা। রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিনযাপন করছিলেন। বংশরক্ষার জন্য বহুদিন ধরে ধর্মকর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না, তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন। তাই সকল ঐশ্বর্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন সরস্বতী পূজার দিনক্ষণ ও সময়সূচী ২০২৪

তিনি ভাবতেন- পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূন্য। পিতৃ-দেব- মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না। পুত্রবানজনের এ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু, আরোগ্য, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে।

 নানা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন ‘আত্মহত্যা মহাপাপ, এর ফলে কেবল দেহের বিনাশমাত্র হবে, কিন্তু আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না।

তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে গমন করলেন। বন ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হলেন। এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন। তিনি চক্রবাক,রাজহংস এবং নানারকম মাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন। সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন।

সরোবর তীরে মুনিগণ বেদপাঠ করছিলেন। মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে তিনি দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন। মুনিগণ রাজাকে বললেন- হে মহারাজ! আমরা আপনার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি। আপনার কি প্রার্থনা বলুন। রাজা বললেন- আপনারা কে এবং কি জন্যই বা এখানে সমবেত হয়েছেন?

আরো পড়ুনঃ আপনাকে ক্যান্সার হতে দূরে রাখবে এইসব পুষ্টিকর খাবার গুলো

মুনিগণ বললেন- হে মহারাজ! আমরা ‘বিশ্বদেব' নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে স্নান করতে এসেছি। আজ থেকে পাঁচদিন পরেই মাঘ মাস আরম্ভ হবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি । পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম ‘পুত্রদা’।

তাঁদের কথা শুনে রাজা বললেন- হে মুনিবৃন্দ! আমি অপুত্রক। তাই পুত্র কামনায় অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে একটি পুত্র প্রদান করুন।

মুনিদের কথা শোনার পর যথাবিধানে রাজা কেবল ফলমূলাদি আহার করে সেই ব্রত অনুষ্ঠান করলেন।

দ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন। মুনিদের প্রণাম নিবেদন করে নিজগৃহে ফিরে এলেন। ব্রতপ্রভাবে রাজার যথাসময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল ।

হে মহারাজ! এ ব্রত সকলেরই পালন করা কর্তব্য। মানব কল্যাণ কামনায় আপনার কাছে আমি এই ব্রত কথা বর্ণনা করলাম।

নিষ্ঠা সহকারে যারা এই পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে, তারা ‘পুত' নামক নরক থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। আর এই ব্ৰত কথা শ্রবণ-কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ এই শীতে ঝটপট তৈরি করুণ মজাদার সবজি খিচুড়ি

পারণের সময়সূচী :

২২শে জানুয়ারি রোজ সোমবার সকাল ৬.৫০ মিনিট হতে ১০.২৪ মিনিটের মধ্যে। 

পারণ মন্ত্র :

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব। 

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।। 

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।  

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url