পবিত্র বরুথিনীএকাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

হরে কৃষ্ণ 🙏বন্ধুরা, সবাইকে আমার নমস্কার। আশা করি সবাই ভালো আছে। আমাদের সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে ২৪ টি একাদশী ব্রত পালিত হয়। আর প্রতিটি একাদশী রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও মাহাত্ম্য। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী ' বরুথিনী ' নামে প্রসিদ্ধ। এই একাদশী ব্রত পালনে সর্বদা সুখ লাভ হয় এবং পাপক্ষয় ও সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটে। আগামী ৪ঠা মে রোজ শনিবার পালিত হবে এই বরুথিনী একাদশী ব্রত। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের জানাবো এই অতি পবিত্র বরুথিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য, একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য, পরের দিন পারণের সময়সূচি ও পারণ মন্ত্র -


বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই অতি পবিত্র বরুথিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -

বরুথিনী একাদশীর মাহাত্ম্য:

বৈশাখ কৃষ্ণপক্ষীয়া বরুথিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণনা করা হয়েছে। যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে বাসুদেব! আপনাকে প্রণাম। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী কি নামে প্রসিদ্ধ এবং তার মহিমাই বা কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন।

আরো পড়ুনঃ সুপারফুড গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে রাজন! ইহলোক ও পরলোকে বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ‘বরুথিনী’ নামে বিখ্যাত। এই ব্রত পালনে সর্বদা সুখ লাভ হয় এবং পাপক্ষয় ও সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটে। দুর্ভাগা স্ত্রীলোক এই ব্রত পালনে সর্বসৌভাগ্য লাভ করে থাকে। ভক্তি ও মুক্তি প্রদানকারী এই ব্রত সর্বপাপহরণ এবং গর্ভবাস যন্ত্রণা বিনাশ করে। এই ব্রত প্রভাবে মান্ধাতা, ধুন্ধুমার আদি রাজারা দিব্যধাম লাভ করেছেন। এমনকি মহাদেব শিব ও এই ব্রত পালন করেছিলেন। দশ হাজার বৎসর তপস্যার ফল কেবলমাত্র এক বরুথিনী ব্রত পালনে লাভ হয়। যে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি এই ব্রত পালন করেন তিনি ইহলোক ও পরলোকে সমস্ত প্রকার বাঞ্চিত ফল লাভ করেন।

হে নৃপশ্রেষ্ঠ! অশ্বদান অপেক্ষা গজদান শ্রেষ্ঠ, গজদান থেকে ভূমিদান, তা থেকে তিলদান, তিলদান থেকে স্বর্ণদান এবং তা অপেক্ষা অন্নদান শ্রেষ্ঠ। অন্নদানের মত শ্রেষ্ঠদান আর নেই। পিতৃলোক, দেবলোক ও মানুষেরা অন্নদানেই পরিতৃপ্ত হন। পন্ডিতেরা কন্যাদানকে অন্নদানের সমান বলে থাকেন। স্বয়ং ভগবান গোদানকে অন্নদানের সমান বলেছেন। আবার এই সমস্ত প্রকার দান থেকেও বিদ্যাদান শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এই বরুথিনী ব্রত পালনে সেই বিদ্যাদানের সমান ফল লাভ হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ নিজেকে সুন্দর রাখতে বাড়িতেই করুন DIY গোল্ড ফেসিয়াল

পাপমতি যে সব মানুষ কন্যার উপার্জিত অর্থে জীবনধারণ করে, পুণ্যক্ষয়ে তাদের নরকযাতনা ভোগ করতে হয়। তাই কখনও কন্যার উপার্জিত অর্থ গ্রহণ করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার সহ কন্যাদান করেন তাঁর পুণ্যের হিসাব স্বয়ং চিত্রগুপ্তও করতে অসমর্থ হন। কিন্তু ‘বরুথিনী’ ব্রত পালনকারী কন্যাদান থেকেও বেশি ফল লাভ করে।

ব্রতকারী ব্যক্তি দশমীর দিনে কাঁসার পাত্রে ভোজন, মাংস, মসুর, ছোলা, শাক, মধু, অন্যের প্রদত্ত অন্নগ্রহণ, দুইবার আহার ও মৈথুন পরিত্যাগ করবে। দ্যূতক্রীড়া, নেশাজাতীয় দ্রব্য, দিবানিদ্রা, পরনিন্দা-পরচর্চা, প্রতারণা, চুরি, হিংসা, মৈথুন, ক্রোধ ও মিথ্যাবাক্য একাদশীর দিনে বর্জনীয়। কাঁসার পাত্রে ভোজন, মাংস, মসুর, মধু, তেল, মিথ্যাভাষণ, ব্যায়াম, দুইবার আহার ও মৈথুন এসব দ্বাদশীর দিনে পরিত্যাজ্য।

হে রাজন! এই বিধি অনুসারে বরুথিনী ব্রত পালনে সকল প্রকার পাপের বিনাশ এবং অক্ষয় গতি লাভ হয়। যিনি হরিবাসরে রাত্রিজাগরণ করে ভগবান জনার্দনের পূজা করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে পরমগতি লাভ করেন। তাই সূর্যপুত্র যমরাজের যাতনা থেকে পরিত্রাণের জন্য পরম যত্নে এই একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। বরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা শ্রদ্ধাভরে পাঠ বা শ্রবণ করলে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয় এবং সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়।

আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে সেরা ৩ টি উপায়ে গুগল থেকে টাকা আয় করুন

একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য :

★ ধান জাতীয় - 

চাল,মুড়ি,চিড়া,খই, শ্যামাচাল,কাউন ইত্যাদি। 

★ গম জাতীয় -  

আটা,ময়দা,সুজি,পউরুটি,হরলিক্স,বিস্কুট ইত্যাদি। 

★যব/ভূট্টা জাতীয় -

 ছাতু,ভুট্টার খই ইত্যাদি। 

★ ডাল জাতীয় -

 সব ধরনের ডাল। 

★ সবজি জাতীয় - 

বরবটি, শিম,মটরশুঁটি, বেগুন,টমেটো, গাজর,মূলা ইত্যাদি। 

★ তৈল জাতীয় - 

সরিষা তেল,সয়াবিন তেল,তিল তেল ইত্যাদি। 

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন টমেটোর আবাক করা জাদুকরী গুনাগুন

পারণের সময়সূচী :

৫ই মে রোজ রবিবার সকাল ৫.২৭ মিনিট হতে ৯.৩৭ মিনিটের মধ্যে। 

পারণ মন্ত্র :

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব। 

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।। 

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।  

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে বরুথিনী একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url